আকতার নুর 

গলফের মাঠ, দিল খোলা ময়দান ছিলো। লক্ষ লক্ষ পর্যটক এসে ভীড় করতো এখানে। স্থানীয় মানুষও খোলা মাঠের দিলখোলা উদারতার স্বাধীনতা উপভোগ করে আসছিলো শত শত বছর ধরে। লাবণী বিচ ছিলো মুগ্ধকর ঝাউবীথিকার প্রকৃতি। লাবণী বিচ থেকে আর একটু পা বাড়ালেই সারিসারি ঝাউগাছের মাঝে ছোট ছোট পাহাড় সদৃশ বালির টিলার আড়ালে রচিত হতো কত প্রেম-বিরহের গল্প। সুগন্ধা বিচ তো পুরোটাই নৈসর্গের লীলাভূমি, সমুদ্র প্রকৃতির তীর্থস্থান!

দিলখোলা সেই মাঠকে করেছেন ক্রিকেট-স্টেডিয়াম নমীয় ইট পাথরের ঝঞ্জাল! লাবণীর মুখ ঢেকেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য দালান করে! বুক ঢেকেছেন ছাতা মার্কেট নমীয় গিঞ্জি দোকানে। নিতম্ব ভোগ করছে বিজিবি’র ক্যাফে আর রেস্ট হাউসে! পশ্চাৎদেশ বনবিভাগের কর্তাবাবুদের বিলাসী আশ্রয়কেন্দ্র! আর সর্বশেষ পা দু’টোও কেটে প্যাকেট করেছে সেনাকল্যানের জলকেলীর জন্য- ‘জলতরঙ্গ’ নামে!

ফলশ্রুতিতে ধর্ষিতা লাবণী হাঁসফাস করতে করতে মরছে অদ্যাবদি। মুক্তি নেই, মুক্তি মিলবে এমন ভরসাও নেই। সমুদ্রকে খেয়েছেন, সমুদ্র আপনাদের ছাড় দেবে ভেবেছেন? কবিতা চত্বর, শৈবাল বিচে একটু দৃষ্টিপাত করুন, প্রকৃতির রেপিডএ্যাকশান বুঝতে অসুবিধে হবেনা। গণমানুষের হৃদয় প্রশান্ত করার প্রকৃতি গিলেছেন, ভেবেছেন স্বার্থক সরকারি আমলা জনম? ভাইলোগ, সরকারি আমলা কি চিরদিন র’বেন? ক’দিন পরেই তো ফের গণমানুষ-ই হবেন! তখন দমবদ্ধ এই শহর ছেড়ে কোন প্রকৃতির নির্যাস নেবেন শুনি?

নৈসর্গিক সুগন্ধাকে করেছেন আবর্জনার ভাগাড়! বেসামাল টং দোকানের অভয়ারণ্য! আর ক’টা দিন পর, সুগন্ধাও মরবে অস্থির দখল-দূষণে!

মেরিন ড্রাইভের আনাচ-কানাচও খালি নেই। দখল শ্যাষ বহু আগেই। ইটপাথরের গাঁথুনিও চলছে ধীরলয়ে।

এবার চোখ পড়েছে নীল সমুদ্রের সবুজ টিপ সেন্টমার্টিন দ্বীপে! পরিবেশ, প্রতিবেশের দোহায় দিয়ে ভীন্ন-স্টাইলে দখল নিতে চান সেন্টমার্টিনও! প্রকৃতির সাথে মানুষের একাত্ব হওয়ার ঐতিহাস অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চান! কী Ridiculous মানসিকতা আপনাদের! কী ন্যারোটিভ চিন্তা-ভাবনা!

Syeda Rizwana Hasan আপনার দামি দামি গাড়িতে চড়ে, সারাক্ষণ এসির নির্মল বাতাসে আরাম আয়েশে থেকে বাতাসে বিষময় কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়ে ঢাকাকে দুনিয়ার সব’চে বেশি দূষিত বাতাসের শহরে পরিণত করে আমাদের উপর পরিবেশের নসিহত জারি করেন কোন যুক্তিতে!

পরিবেশ নষ্টকারী আপনারাই, আপনাদের কাছে জিম্মি ঢাকা শহরেই দেড়শো লাখ মানুষ! সেই আপনারাই নির্মল বাতাসের নীল সমুদ্রের সেন্টমার্টিনের পরিবেশের নসিহত শুনতে হবে?

Chief Adviser GOB মহোদয়, সেন্টমার্টিনের শত শত বছর ধরে বসবাসরত একেকটা প্রাণের জীবনযাত্রার যন্ত্রণা, বেঁচে থাকার সংগ্রাম কী জানেন? যার মাতৃভূমি তাদের মতামত ছাড়াই বিঁধি-নিষেধ জারি করার মতো জুলুম কিভাবে করছেন আপনার নিযুক্ত এনজিও উপদেষ্টা? কার স্বার্থ হাঁচিল করার পায়তারা এসব?

মানুষের বিচরনে কখনো পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়না। ধ্বংস হয় আপনাদের মত গোবরে মস্তিস্কের লোকদের অনাদরে, অবহেলায়, গাফিলতিতে। ধ্বংস হয় পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনার অভাবে। কার্যকরি সরকারি ভূমিকার অভাবে।

এতই যদি সেন্টমার্টিন রক্ষা করতে চান তবে-

-সেন্টমার্টিনের সকল ধরনের প্লাস্টিকজাত পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন।

-দ্বীপেরর মূল ভূখন্ড থেকে অর্ধকিলোমিটার দীর্ঘ জেটি তৈরি করুন।

-ইটপাথরের দালান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করুন।

-ইকো কটেজ করার লাইসেন্স প্রদান করুন।

-সেন্টমার্টিনের যে কোন একটি সমুদ্রতট পর্যটকশূণ্য প্রাণীর অভয়ারন্য ঘোষণা করুন।

-প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে আনার জন্য একটি জাহাজ নিয়োজিত করুন।

-বনবিভাগকে নিয়োজিত করে সেন্টমার্টিনে বিদ্যমান ঝাউগাছ, কেয়াগাছ, নারিকেল গাছ সহ আরো নানান সামুদ্রিক বনায়ন বিস্তার করুন।

-সেন্টমার্টিনে উৎপাদিত পূর্ণমাত্রার বিদ্যুৎ নিষিদ্ধ করে সৌরবিদ্যুৎ বাধ্যতামূলক করুন।

এসবই আপনাদের করনীয়তে পড়ে সরকার বাহাদুর। মানুষের বিচরন নিষিদ্ধ করা আপনাদের করনীয় বিষয় নয়। বরং মানুষকে প্রকৃতির সাথে একাত্ব হওয়ার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই আপনাদের দায়িত্ব। মাথা ব্যথার জন্যে মাথা কেটে পেলার মত গর্হিত সিদ্ধান্ত আহাম্মকও ন্যায়না। পর্যটন নগরীগুলো ধ্বংস করে দিবেননা আর। করজোড়ে মিনতি করছি। এমনিতেই করোনার কারণে এই শিল্পের কোমরভাঙ্গা। সেই ভাঙ্গা কোমরে বুলডোজার চালাবেন-না দয়া করে।

#সেন্টমার্টিনে_সুরক্ষিত_পর্যটন_গড়ে_তুলুন
#পর্যটন_অবিরত_রাখতে_আওয়াজ_তুলুন_সমস্বরে

জয়তু পর্যটন প্রকৃতি
জয়তু সেন্টমার্টিন।